কাজী নজরুল ইসলাম
• কবিতার সারাংশ : আলোচ্য কবিতায় বলা হয়েছে হিন্দু আর মুসলমান ভারতের একই সঙ্গে বাস এবং তার সহোদর ভাই। খোদা অর্থাৎ ঈশ্বর আমাদের উভয়ের সৃষ্টিকর্তা। আমরা অকারণ ঝগড়া করে তার সৃষ্টিকে অমান্য করি।দেশে কোনো রোগ বালাই দেখা দিলে হিন্দু ও মুসলমান সকলেই ভোগে, বন্যায় উভয়ের বাড়ি-ঘর নষ্ট হয়। হিন্দু ও মুসলমানের জমিতে একই সঙ্গে বৃষ্টির জল পড়ে। চাঁদ ও সূর্য একইভাবে সকলকে কিরণ দেয়। ঈশ্বর যা কিছু দান করেন উভয়কে সমানভাবে করেন। গায়ের রক্তের হয়তো তফাত আছে কিন্তু ভিতরের রং সকলেরই এক।
• শব্দের সরল অর্থ : মোরা—আমরা। সহোদর— একই মায়ের সন্তান। বৃন্ত—বোঁটা। কুসুম-ফুল।
ঠাই—জায়গা। বিপদ—ঝগড়া। খোদা—ভগবান। খোদকারি—অন্যায় চর্চা। শাস্তি—সাজা। হীন-দশা–করুণ অবস্থা।
মড়ক—মহামারি। কুটির—ছোটো মাটির ঘর। সুরুষের—সূর্যের। তফাত—পার্থক্য। ভেদ—তারতম্য।
হাতেকলমে
১.১ কবি কাজী নজরুল ইসলামের কোন্ কবিতা প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র বাংলায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল?
উত্তর। কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র বাংলা সৃষ্টি হয়েছিল।
১.২ তাঁর লেখা দুটি কবিতার বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর। তাঁর লেখা দুটি কবিতার বই হল—অগ্নিবীণা ও বিষের বাঁশি।
২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১ ‘মোরা দুই সহোদর ভাই' কবিতায় সহোদর কারা?
• উত্তর। মোরা দুই সহোদর ভাই কবিতায় হিন্দু ও মুসলমান হল সহোদর।
২.২ 'আমাদের হীন-দশা এই তাই’ – আমাদের এই হীন দশার কারণ কী?
উত্তর। আমাদের এই হীন দশার কারণ-ঈশ্বরের সৃষ্টি নিয়ে আমরা মতভেদ করি, ঝগড়া করি, একে অপরে হানাহানি করি তাই।
২.৩ ‘বাইরে শুধু রঙের তফাত ভিতরে ভেদ নাই'—‘রঙের তফাত’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর। রঙের তফাত বলতে কবি বুঝিয়েছেন যে হিন্দু ও মুসলমান সকলেরই গায়ের রং হয়তো এক নয় কিন্তু ভিতরে অর্থাৎ সকলের রক্তের রং এক।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর লেখো :
৩.১ ‘এক বৃন্তে দুটি কুসুম এক ভারতে ঠাঁই।' পঙ্ক্তিটিতে প্রদত্ত উপমাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর। কবি কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দু ও মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য সাধনের জন্য এই উপমাটি ব্যবহার করেছেন। আমরা দেখি যে ফুলের গাছে একটি বৃত্তে দুটি ফুল ফুটে থাকতে, আবার এও দেখি যে ফুল দুটি হয়তো একইরকম নয় কিন্তু বৃত্ত একটাই—একই গাছ থেকে সৃষ্টি। তেমনি কবি বলতে চেয়েছেন যে হিন্দু মুসলমানকে আমরা আলাদা করে দেখি বটে কিন্তু আসলে তারা একই ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্ট অর্থাৎ সহোদর ভাই। অতএব এদের কোনো ভেদাভেদ নাই।
৩.২ সব জাতিরই লকে তার দান যে সমান করে'—কার, কোন্ দানের কথা এখানে বলা হয়েছে?
উত্তর। আলোচ্য অংশে সকলের সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বররের দানের কথা বলা হয়েছে।
ঈশ্বরের দানগুলি হল—সূর্য ও চন্দ্রের আলো, বৃষ্টির জল। আবার মহামারি, রোগ, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগকেও শ্বরের দান বলা হয়েছে। কারণ এগুলি প্রকৃতি আমাদের সকলকে সমানভাবে দান করে।
৩.৩ ‘চাঁদ-সুরুষের আলোকেই কমবেশি কি পাই’—চাঁদ সুরুষের আলো কী? কবির এই প্রশ্নটির অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর। রাত্রিবেলায় চাঁদ আমাদের যে কিরণ দেয় এবং দিনের সূর্যের আলো অর্থাৎ রৌদ্রকে ‘চাঁদ সুরুষের আলো’ বলা হয়েছে।
কবি বলতে চেয়েছেন যে হিন্দু ও মুসলমান একই ঈশ্বরের সৃষ্টি। এদের মধ্যে কোনো তফাত নাই, যদিও আমরা অনেকেই এ নিয়ে ভেদাভেদ করি। কবির মতে হিন্দু ও মুসলমান একই ঈশ্বরের সৃষ্টি এবং ঈশ্বরের যাবতীয় দান, যেমন চাদের ও সূর্যের আলো, বর্ষার জল র্থাৎ বৃষ্টি, বন্যা, নানারকম অসুখ-বিসুখ, মহামারি সবই আমরা একই ঈশ্বরের বিচার্য থেকে পেয়ে থাকি এবং সমানভাবে পেয়ে থাকি। তাহলে আমাদের মধ্যে তফাতটা কোথায় থাকে—আর সেই কারণেই আমরা হিন্দু-মুসলমান সহোদর ভাই। এর বিষয় তর্ক করা মানে ঈশ্বরের নীতিকে অমান্য করা বা অশ্রদ্ধা করা।
৪. নীচের বাক্যগুলি থেকে সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া চিহ্নিত করে লেখো :
৪.১ মোরা বিবাদ করে খোদার উপর করি যে খোদকারি।
উত্তর। করে—অসমাপিকা ক্রিয়া, করি-সমাপিকা ক্রিয়া।
৪.২ দুই জাতি ভাই সমান মরে মড়ক বলে দেবো।
উত্তর। করে—অসমাপিকা ক্রিয়া।
৫. সন্ধিবিচ্ছেদ করো : সহোদর, সৃষ্টি, বৃষ্টি, শাস্তি।
সহোদর = সহ + উদয়।
শাস্তি= শাস + তি।
বৃষ্টি= বৃষ + তি।
৬. ‘বি’ উপসর্গ যোগে পাঁচটি শব্দ তৈরি করো।
উত্তর। (১) বিবাহ, (২) বিষাদ, (৩) বিবাদ, (৪) বিনাশ ও (৫) বিষয়।
৭. নীচের বিশেষ্য শব্দগুলিকে বিশেষণে রূপান্তরিত করে লেখো :
কুসুম, ভারত, সৃষ্টি, বিবাদ, জাতি, রং।
উত্তর। কুসুম—কুসুমিত।
বিবাদ—বিবাদী।
ভারত—ভারতীয়।
জাতি—জাতীয় ।
সৃষ্টি-সৃষ্ট।
রং—রাঙা।
৮.নীচের বাক্যগুলির উদ্দেশ্য ও বিধেয় অংশ ভাগ করে দেখাও :
উদ্দেশ্য; 👉 বিধেয়
৮.১ হিন্দু আর মুসলিম মোরা 👉দুই জনারই মাঠেরে ভাই।
৮.২ দুই সহোদর ভাই 👉সমান বৃষ্টি ঝরে।
৮.৩ বন্যাতে দুই ভায়ের কুটির👉 সমানে যায় ভেসে।
৮.৪ চাঁদ সুরুষের আলো কেহ 👉কম বেশি কি পাই।
...