এক ভূতুড়ে কাণ্ড গল্পের প্রশ্ন উত্তর ক্লাস সিক্স |এক ভূতুড়ে কাণ্ড - শিবরাম চক্রবর্তী প্রশ্ন উত্তর |Ek Vuture Kando questions answers Class 6--Wbbse
এক ভূতুড়ে কাণ্ড
শিবরাম চক্রবর্তী
বিষয় সংক্ষেপ : লেখকের জীবনের রাঁচির সরকারি রাস্তায় একটা অদ্ভুত ঘটনার বিবরণ এই গল্পে বর্ণনা করা হয়েছে।
ভূত লেখককে কোনােদিন দেখা দেননি। দিলেও লেখক তাদের দেখতে পারতেন না। ভূত নিয়ে লেখকের না আছে মােহ না আছে ইচ্ছা। পরের একটা সাইকেল পেয়ে রাঁচি থেকে কিছু দূরে লেখক হুড়ু ফসল দেখতে গিয়েছিলেন।
সাত মাইল পথ অতিক্রম করার পর তার সাইকেলের টায়ার একটা ফেঁসে গেল। আরও মাইল পাঁচেক যেতে পারলে গাঁয়ের মতাে একটা পাওয়া যেত।
অবশেষে রাচিমুখী একটি লরি দেখা গেলেও সে সামনে এসে না থেমে চলে গেল। এরফলে তিনি অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়লেন। আবার বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা একটি বেবি অস্টিন দেখতে পেলেন। সেটিকে থামানাের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালাতে লাগলেন। গাড়িটির গতিমন্থর ছিল কিন্তু দাঁড়াল না। তখন তিনি দৌড়ে গিয়ে সেই চলন্ত গাড়িতে উঠলেন।
হাতেকলমে
১.১ শিবরাম চক্রবর্তীর পােশাকি নাম কী ?
উত্তর। শিবরাম চক্রবর্তীর পােশাকি নাম চঞ্চল।
১.২ তাঁর লেখা দুটি বিখ্যাত বইয়ের নাম লেখাে।
উওর। তার লেখা দুটি বিখ্যাত বইয়ের নাম ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে এবং ‘হাসির টেক্কা’।
২। নীচের বাক্যগুলি কী ধরনের (সরল/ যৌগিক/জটিল) তা নির্দেশ করে।
২.১ ভূত বলে কিছু আছে?
উত্তর। সরলবাক্য।
২.২ যেখানে সন্ধে সেইখানেই সাইকেলের টায়ার ফাসে।
উত্তর। জটিল বাক্য।
২.৩ একটা পরস্মৈপদী সাইকেল হাতে পেয়ে হুডুর দিকে পাড়ি জমিয়েছিলাম, কিন্তু মাইল খানেক না যেতে যেতেই তার একটা টায়ার ফেসে গেল।
উত্তর। যৌগিক বাক্য
২.৪ আমার টর্চবাতিটা জ্বালিয়ে নিয়ে প্রাণপণে ঘােরাতে লাগলাম।
উত্তর। সরলবাক্য।
২.৫ যেখানটায় ড্রাইভার, থাকবার কথা সেখানে কেউ নেই।
উত্তর। জটিলবাক্য।
৩. নীচের বাক্যগুলিতে কী কী অনুসর্গ ব্যবহৃত হয়েছে লেখাে :
৩.১ সাইকেল ঘাড়ে করে যেতে হলেই হয়েছে।
উত্তর। করে।
৩.২ কয়েক মিনিট বাদে সেখান থেকে নামলাম।
উত্তর। থেকে।
৩.৩ তার চেয়ে বাঘের পেটের মধ্যে দিয়ে স্বর্গে যাওয়া ঢের শর্টকাট।
উত্তর। চেয়ে,দিয়ে।
৩.৪ আপনা থেকেই আমার মুখ দিয়েই বেরিয়ে গেল।
উত্তর। থেকেই, দিয়েই।
৪. নীচের বাক্যগুলিকে কর্তাখণ্ড ও ক্রিয়াখণ্ডে ভাগ করাে :
৪.১ আসতে আসতে গাড়িটা আমার সামনে এসে পড়ল।
৪.২ দরজার হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে ঢুকে পড়লাম ভিতরে।
৪.৩ চিরদিনই আমি আশাবাদী।
৪.৪ এগিয়ে এস বললেন ভদ্রলােক।
উত্তর।
কর্তাখণ্ড 👉 ক্রিয়াখণ্ড
৪.১ আসতে আসতে গাড়িটা আমার 👉সামনে এসে পড়ল।
৪.২ দরজার হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে 👉 ঢুকে পড়লাম ভিতরে।
৪.৩ চিরদিনই আমি👉 আশাবাদী।
৪.৪ ভদ্রলােক 👉 এগিয়ে এসে বললেন।
৫. নীচের বাক্যগুলির মধ্যে থেকে সন্ধিবদ্ধ শব্দ বেছে নিয়ে সন্ধিবিচ্ছেদ করাে।
৫.১ কিন্তু গাড়িটার থামবার কোনাে লক্ষণ নেই।
উত্তর। কিন্তু = কিম্ + তু।
৫.২ আমার পাশ কাটিয়ে যাবার দুর্লক্ষণ দেখে আমি মরিয়া হয়ে উঠলাম।
উত্তর। দুর্লক্ষণ = দুঃ + লক্ষণ।
৫.৩ শেষ পর্যন্ত আস্তে আস্তে আসছিল গাড়িটা।
উত্তর। পর্যন্ত = পরি + অন্ত।
৫.৪ কাল সকালে উদ্ধার করা যাবে।
উত্তর। উদ্ধার = উৎ + হার।
৬. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও :
৬.১‘সাইকেল ঘাড়ে করে যেতে হলেই হয়েছে।”—লেখকের গন্তব্য কোথায়? সাইকেল ঘাড়ে করে যাওয়ার প্রসঙ্গ এসেছে কেন?
উত্তর। লেখক শিবরাম চক্রবর্তী গন্তব্যস্থল ছিল রাঁচির হুড়ু জলপ্রপাত।
মাইল সাতেক পথ অতিক্রম করার পর লেখকের সাইকেলের টায়ার ফেঁসে যায়। তখন তিনি কীভাবে ফিরবেন সেটা বুঝতে পারছিলেন না। ফলে সাইকেল ঘাড়ে করে যাওয়ার প্রসঙ্গ এসেছে।
৬.২ ‘যেখান বাঘের ভয়, সেইখানেই সন্ধে হয়’—প্রবাদটির মর্মার্থ কী? একই ভাব বােঝাতে তুমি আরেকটি । প্রবাদ উল্লেখ করাে।
উত্তর। যেখানে বাঘের ভয় সেইখানেই সন্ধে হয়’—এই প্রবাদটির মর্মার্থ যেখানে বিপদ আর ভয় করা হয়, সেখানেই বিপদ এসে যায়।
এরকম আরেকটি প্রবাদ হল—এগুলাে সর্বনাশ পিছলে নির্বংশ।
৬.৩ ‘চিরদিনই আমি আশাবাদী’—এই আশাবাদের গুণে লেখক কীভাবে পুরস্কৃত হলেন?
উত্তর। লেখক চিরকালই আশাবাদী এই কারণে তার জীবনে বিপদ এলে তা থেকে মুক্ত হওয়ার একটি পথ তিনি অবশ্যই পেয়ে যাবেন।
রাঁচি যাওয়ার পথে লেখকের সাইকেলের টায়ার ফেঁসে যায়। তিনি অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করেও কোনাে যানবাহন পেলেন না। অবশেষে আশার আলাে তিনি দেখলেন, একটি বেবি অস্টিন গাড়ি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসছিল। সেই গাড়িতে চেপে তিনি রাঁচির কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন। লেখকের আশাবাদ এইভাবে চরিতার্থ হয়েছিল।
৭. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর লেখাে :
৭.১ অনর্থক কেবল টর্চটাকে আর নিজেকে টর্চার করা’-কোন্ ঘটনা প্রসঙ্গে উদ্ধৃতিটির অবতারণা? আর টর্চার’ শব্দের প্রয়ােগে যে শব্দ নিয়ে খেলা তৈরি হয়েছে, গল্প থেকে খুঁজে এমন কয়েকটি উদাহরণ দাও। তুমি নিজে এ জাতীয় কয়েকটি বাক্য লেখাে।
উত্তর। একবার রাঁচির রাস্তায় সাইকেলের টায়ার ফেঁসে যাওয়ায় লেখক খুব বিপদে পড়েন। তখন তিনি ফেরার
জন্য গাড়ির অপেক্ষায় রইলেন। কিন্তু কোনাে গাড়ির দেখা পেলেন না। এমন সময় একটা লরি এলেও সে লেখকের টর্চের সংকেতকে উপেক্ষা করে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। এই ঘটনা প্রসঙ্গে লেখক উদ্ধৃতিটির অবতারণা করেছেন।
উদাহরণগুলি হল—(১) রাজপথ না হলেও সেটা বেশ দরাজ পথ। (২) অঘটনগুলাে ঘটবে না। (৩) এসপার ওসপার যা হােক। (৪) পেরে লাভ? লাভ তাে ডিমের। (৫) হুশ হুশ করে ট্রেনটা চলে যাবার পর আমার হুঁশ হল।
৭.২ গল্প অনুসরণে সেই নির্জন বনপথে লেখকের রােমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কথা নিজের ভাষায় বর্ণনা করাে।
উত্তর। সারাংশ দেখে নিজে লেখাে।
৭.৩ বাঘের দৃষ্টিভঙ্গি ওরকম উদার হতে পারে না।’-কোন্ উদার দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলা হয়েছে? লেখকের কাছে সেই দৃষ্টিভঙ্গি’ কতটা উদারতা নিয়ে এসেছিল, তা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর। এখানে ড্রাইভারহীন বিকল বেবি অস্টিন গাড়িটির উদার দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলা হয়েছে। লেখক রাঁচির রাস্তায় সাইকেলের টায়ার ফেঁসে যাওয়ার জন্য অন্য গাড়ির অপেক্ষায় অনেকক্ষণ ধরেছিলেন। অবশেষে বেবি অস্টিন গাড়িটিধীর গতিতে ওই রাস্তার ওপর দিয়ে যাচ্ছিল। লেখক ওই গাড়িতে উঠে পড়ে রাঁচির কাছে ফিরতে সমর্থ হয়েছিলেন। ওই গাড়িটার জন্য তিনি বিপদের হাত থেকে উদ্ধার পেলেন। সেই কারণেই বেবি অস্টিন গাড়ির দৃষ্টিভঙ্গি লেখকের কাছে বিশাল উদারতা নিয়ে এসেছিল।
৭.৪ ‘এই হয়ত সশরীরে রাঁচি ফেরার শেষ সুযােগ’-কোন্ সুযােগের কথা বলা হয়েছে? লেখক কীভাবে সেই সুযােগকে কাজে লাগালেন ?
উত্তর। লেখক রাচি ফেরার জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করছিলেন কিন্তু কোনাে যানবাহন পেলেন না। অবশেষে একটি বেবি অস্টিন গাড়ি ধীর গতিতে আসছিল। ওই ধীরগতিসম্পন্ন বেবি অস্টিন গাড়িতে চেপে রাঁচি পৌঁছানাের সুযােগের কথা বলা হয়েছে।
লেখক গাড়িটির কাছে এগিয়ে গিয়ে দরজার হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে গাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়লেন। কায়দা করে কোনাে গতিতে তিনি গাড়িতে উঠে পড়লেন। তিনি মনে করলেন এই হয়তাে সশরীরে রাচি ফেরার শেষ সুযােগ।
৭.৫ ‘আমি হাঁ করে তাকিয়ে থাকলাম’—লেখক কেন তার কথা অসমাপ্ত রেখে হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন?
উত্তর। লেখক রাচির রাস্তায় বেবি অস্টিন গাড়ি পেয়ে তাতে উঠে পড়লেন। গাড়িতে উঠে নিজের গন্তব্যস্থলের কথা বলতে গিয়ে বিস্ময়ে ভয়ে হতভম্ব হয়ে গেলেন। তিনি দেখলেন ড্রাইভারের সিটে কেউ নেই। ইঞ্জিন বিকল অথচ গাড়িটি ধীরে ধীরে ঠিকপথে চলছিল। এই ঘটনা দেখে লেখক তার কথা অসমাপ্ত রেখে হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন।
৭.৬‘বে-ড্রাইভার গাড়ি যেমন চলছিল তেমনি চলতে লাগল’–‘বে-ড্রাইভার গাড়ি’ গাড়ি চলার প্রকৃত কারণটি কীভাবে গল্পে উন্মােচিত হল?
উত্তর। লেখক রাচির রাস্তায় বেবি অস্টিন গাড়িতে উঠে দেখলেন গাড়িতে কোনাে ড্রাইভার নেই। ঘণ্টা দুয়েক গাড়িটা চলার পর লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে যখন প্রায় রেল লাইনের সামনে এসে পড়েছে তখন দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় লেখক গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন। এমন সময় চশমা পরা একজন লােক মােটরের পেছন থেকে এসে লেখককে গাড়িটা ঠেলতে অনুরােধ করলেন। তিনি বললেন ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ায় তিনি আটমাইল দূর থেকে গাড়িটা ঠেলতে ঠেলতে আসছেন এইভাবে ‘বে- ড্রাইভার গাড়ি’ চলার প্রকৃত কারণ উন্মোচিত হল।
৭.৭। “এবারও আমার আলস্য জয়ী হলাে শেষটায়।”—গল্প অনুসরণে লেখকের উৎকণ্ঠা, আলস্য ও কর্মতৎপরতার দৃষ্টান্ত দাও।
উত্তর। লেখক বেবি অস্টিন গাড়ির দেখা পেয়ে খুব উৎফুল্ল হয়েছিলেন কারণ তাঁর কাছে সেই সময় একটি দানবাহনের বিশেষ প্রয়ােজন ছিল। তিনি গাড়িতে উঠে নিজের গন্তব্যস্থলের কথা বলতে গিয়ে অবাক হয়ে গেলেন কারণ ড্রাইভারের সিটে কেউ নেই অথচ গাড়ি চলছে।
লেখকের উৎকণ্ঠার দৃষ্টান্ত—প্রাণের মায়া ছেড়ে সেই ভূতুড়ে গাড়িকেই আশ্রয় করে রইলেন।
আলস্যের দৃষ্টান্ত—লেখক নেমে হেঁটে যাবার চেষ্টা করেননি। ফলে তাঁর আলস্যই জয়ী হয়েছিল।
কর্মতৎপরতার দৃষ্টান্ত—রেলগাড়ি আসার শব্দ শােনামাত্র লেখকের চমক ভাঙল এবং তিনি গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন বিপদের আশঙ্কায়।
৭.৮ শেষ পর্যন্ত লেখক সেই ‘বেবি অস্টিন’ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন কেন? এরপর তিনি কোন পরিস্থিতির মুখােমুখি হলেন?
উত্তর। ভূতুড়ে গাড়ি করে লেখক যখন শেষ পর্যন্ত স্টেশনের কাছে লেভেল ক্রসিং পেরুলেন তখন রেললাইনের কাছে গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ শুনে নিজের প্রাণ বাঁচাতে তিনি বেবি অস্টিন গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন।
এরপর গাড়ির পিছন থেকে চশমা পরা এক ভদ্রলােক বেরিয়ে এলেন। যিনি গাড়িটাকে আটমাইল দূর থেকে ঠেলতে বলতে নিয়ে আসছিলেন। তিনি লেখককে অনুরােধ করলেনহলাগিয়ে গাড়িটাকে ঠেলার জন্য যাতে তিনি গাড়িটাকে তব্যস্থলে নিয়ে যেতে পারেন। এরূপ পরিস্থিতির মুখােমুখি হলেন লেখক।
**********************************************